ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্নায়ুচাপে গলে গেল স্বপ্ন, টাইব্রেকারে হারল বাংলাদেশ

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০৬:৫২ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

টাইব্রেকার মানেই স্নায়ুর লড়াই, প্রতিটি শট মানেই চাপের পরীক্ষা। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে রোববার সন্ধ্যায় সেই পরীক্ষায় শেষ বাঁকে হোঁচট খেলো বাংলাদেশ। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারল ভারতের কাছে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে স্কোরলাইন ছিল ১-১। এরপর এল সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত কিন্তু ভয়ংকর টাইব্রেকার। যেখানে স্বপ্নের এতটাই কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে গেল লাল-সবুজের ছেলেদের অদম্য যাত্রা।

টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে আসে বাংলাদেশ। মিঠু চৌধুরি নির্ভরতার সঙ্গেই বল জালে পাঠান। ভারতও সমতায় ফেরে। এরপর মুর্শেদ আলী ও জয় আহমেদ পরপর দুইটি গোল করে এগিয়ে রাখেন দলকে। ভারতের দ্বিতীয় শটটি দুর্দান্ত সেভ করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহিন হোসেন- যিনি ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল হজম করে সমালোচিত হয়েছিলেন। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যেন এই সেভে করতে চেয়েছিলেন তিনি।

তখন স্কোরলাইন ৩-১। বাংলাদেশ এক পা রেখেছে শিরোপার দোরগোড়ায়। কিন্তু সেখানেই শুরু হয় নাটক। ভারতের তৃতীয় শট যায় জালে। ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-২।

এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সালের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো দল। গোটা টুর্নামেন্টে যার কাঁধে ভর দিয়েই দল ফাইনালে এসেছে, সেই ফয়সালের শটটি উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। চাপ বেড়ে যায় বাংলাদেশের।

ভারত চতুর্থ শটে গোল করে ম্যাচে ৩-৩ এ সমতা ফেরায়। শেষ শটে বাংলাদেশের হয়ে শাহীনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ভারতের গোলরক্ষক। সুযোগ আসে ভারতের সামনে- শেষ শটেই ম্যাচ জয়ের। মাহিন সর্বশক্তি দিয়ে লাফিয়ে পড়েন, কিন্তু বল থামাতে পারেন না। টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয় ভারতের।

ফাইনালের উত্তেজনায় মাঠে বল গড়াতেই মাত্র ৪৫ সেকেন্ডে গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। ভারতের ফরোয়ার্ড লক্ষ্যভেদ করেন মাহিনের মাথার উপর দিয়ে। গোলরক্ষক তখন পোস্ট ছেড়ে কিছুটা সামনে। সেই সুযোগে ম্যাচে শুরুতেই লিড নেয় ভারত।

প্রথম ২০ মিনিট টানা চাপে রাখে ভারত। বাংলাদেশের ডিফেন্স ও মাহিন ছিলেন রীতিমতো ব্যস্ত। ধীরে ধীরে খেলার ছন্দ খুঁজে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে একটি বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৪২ মিনিটে কর্নার থেকে গোল করেছিল বলেই মনে হচ্ছিল, কিন্তু রেফারির আগেই বাজানো বাঁশিতে সে আশাও ভেস্তে যায়। রেফারির সিদ্ধান্তে হতবাক হন বাংলাদেশের ফুটবলাররা।

দ্বিতীয়ার্ধে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ৬২ মিনিটে কর্নার থেকে গোলমুখে তৈরি হওয়া জটলায় জয় আহমেদের নেওয়া শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ঢুকে পড়ে জালে। সমতায় ফেরে ম্যাচ। ভারতের এই আসরে সেটিই ছিল প্রথম গোল হজম।

ম্যাচের শেষভাগে দুটি ভালো সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনজুরি টাইমে একবার গোললাইন সেভে রক্ষা পায়। ভারতের ফরোয়ার্ড ফাঁকা পোস্ট পেয়েও দুর্বল শট করেন, ডিফেন্ডার তা সেভ করেন। এরপরই রেফারির বাঁশি- খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই গলে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন।

পরাজয় বেদনার, বিশেষ করে যখন জয় মাত্র এক ধাপ দূরে ছিল। কিন্তু গোটা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসাযোগ্য। রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণে দল হিসেবে খেলেছে তারা। টাইব্রেকারে একটু ব্যর্থতা, তবে আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার আলো ঠিকই দেখিয়ে গেল জয়-ফয়সালদের দল।

এই পরাজয় শুধুই এক ম্যাচের- তাদের লড়াই, আত্মত্যাগ আর সাহসিকতা ভবিষ্যতের জন্য আশার বাতি জ্বালিয়ে রাখল।

 

বাংলাধারা/এসআর