ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

‘থামা’: ভৌতিক-হাস্যরসের ব্যর্থ মিশ্রণ, ছন্দপতনে হারাল রাশমিকা-আয়ুষ্মান

বিনোদন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০১:৪৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বলিউডের হরর-কমেডি ঘরানায় ম্যাডক ফিল্মস একসময় দর্শকের আস্থা জয় করেছিল ‘স্ত্রী’, ‘ভেড়ীয়া’ ও ‘মুঞ্জা’র মতো সফল ছবির মাধ্যমে। তাই তাদের নতুন সিনেমা ‘থামা’ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু সেই প্রত্যাশার ভার সামলাতে পারেনি পরিচালক অমর কৌশিকের এই চলচ্চিত্র। গল্প, অভিনয় ও নির্মাণ, সবদিক থেকেই ‘থামা’ হয়ে উঠেছে এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির গল্প।

সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় আলোক গোয়েলকে (আয়ুষ্মান খুরানা), ব্যর্থ এক ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর, যিনি ভাইরাল হওয়ার আশায় প্রবেশ করেন এক নির্জন জঙ্গলে। সেখানে তার দেখা হয় তাদাকা (রাশমিকা মান্দানা)-র সঙ্গে যিনি মানুষ নন, বরং ‘বেতাল’ নামের এক রহস্যময় প্রজাতির সদস্য। এই বেতালরা দুষ্ট মানুষের রক্ত পান করে টিকে থাকে, আর তাদের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো।

গল্পে এরপর আসে ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এক ফ্ল্যাশব্যাক, যেখানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে বেতালদের নেতা যক্ষসন (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী)। এই দৃশ্যগুলোতে পরিচালক পৌরাণিক কাহিনি, ইতিহাস ও রাজনীতির মিশেলে এক গভীর রূপক তৈরি করতে চেয়েছেন, বেতালদের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন সমাজের হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও নৈতিক পতনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রচেষ্টা মাঝপথেই ভেঙে পড়ে।

প্রথমার্ধে সিনেমাটি গতিশীল ও রহস্যময় হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে এসে হারিয়ে যায় গল্পের দিকনির্দেশনা। পরিচালক যেন নিজেই জানেন না তিনি দর্শককে কোথায় নিতে চান। আলোক ও তাদাকার প্রেমের গল্পটিও তৈরি হয়েছে অগভীরভাবে, পরিচয়ের পরের দৃশ্যেই প্রেম, কোনো আবেগ বা রসায়ন ছাড়াই। ফলে সম্পর্কটি দর্শকের কাছে অনিশ্চিত ও অবিশ্বাস্য মনে হয়।

সিনেমাটির রাজনৈতিক রূপক ও মিথ-ভিত্তিক ক্যানভাসই হতে পারত এর শক্তি, কিন্তু সেটিকে ছাপিয়ে গেছে তিনটি অপ্রয়োজনীয় গান ও আইটেম নম্বর। এই সংযোজন গল্পের গতি ও ভৌতিক আবহ—দুটোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

অভিনয়ের দিক থেকেও হতাশ করেছে ‘থামা’। আয়ুষ্মান খুরানা তার চরিত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও আগের চরিত্রগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন চোখে পড়ে। রাশমিকা মান্দানার চরিত্রটি গ্ল্যামার আর ভিএফএক্সের আড়ালে মানবিক গভীরতা হারিয়েছে। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী যেমন সবসময় পর্দায় উপস্থিতিতে মন কাড়েন, তেমনি এখানেও করেছেন, কিন্তু দুর্বল স্ক্রিপ্ট তার যক্ষসন চরিত্রকে প্রাণ দিতে পারেনি।

২০২৫ সালের ‘সিনার্স’, ‘সিস্টার মিডনাইট’ কিংবা ‘ড্রাকুলা: আ লাভ টেল’-এর মতো সিনেমাগুলো যেখানে অতিপ্রাকৃত ঘরানাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, সেখানে ‘থামা’ একেবারেই দিশাহারা। এর মিথ, রাজনীতি ও প্রেম—সবকিছুই এলোমেলোভাবে মিশে গেছে, যেন এটি হলিউডের ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের এক দুর্বল ভারতীয় সংস্করণ।

সব মিলিয়ে ‘থামা’ হতে পারত এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা যেখানে ইতিহাস, প্রেম আর ভৌতিক উপাদান মিলিয়ে তৈরি হতো এক নতুন জগৎ। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মরেফারেন্স, বিভ্রান্ত স্ক্রিপ্ট আর আবেগহীন পরিচালনায় এই সিনেমা পরিণত হয়েছে বলিউডের হরর-কমেডি ধারার আরেকটি হতাশাজনক অধ্যায়ে।

বাংলাধারা/এসআর