রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণে বড় বাধা সাইবার বুলিং: সেমিনারে বক্তারা
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০৭:১২ বিকাল
ছবি: বাংলাধারা
দেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল প্রেক্ষাপটে যেমন তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার ঘটছে, তেমনি বাড়ছে নারীদের প্রতি অনলাইন সহিংসতা ও সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা। বিশেষ করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নারীরা অনলাইনে যে ধরনের হয়রানি ও চরিত্রহননের শিকার হচ্ছেন, তা তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আবদুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘দ্য বাংলাদেশ রেজোনেয়ার’ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নারী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মানহানিকর মন্তব্য ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা পাঠানোর প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্ররাজনীতিতেও নারী প্রার্থীদের ধর্ষণের হুমকি বা ব্যক্তিগত চরিত্রহননের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত এক গবেষণার তথ্যে বলা হয়, দেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকারদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই নারী ও কিশোরী। এদের অনেকেই রিভেঞ্জ পর্নোগ্রাফি, ভুয়া প্রোফাইল তৈরি, অনলাইন ব্ল্যাকমেইল এবং অশালীন বার্তার মতো অনলাইন সহিংসতার শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন- অনেকেই সপ্তাহে একাধিকবার এমন হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবও ভয়াবহ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দশজন নারী ভুক্তভোগীর একজন মারাত্মক ডিপ্রেশনে ভোগেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক, কারণ এতে নারীরা নেতৃত্বের ক্ষেত্র থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রিপোর্টকৃত অনলাইন অপরাধের ৫২ শতাংশই সাইবার বুলিং সম্পর্কিত, যার একটি বড় অংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮সহ নানামুখী নীতি গ্রহণ করেছে, তবে বাস্তব প্রয়োগ ও মনিটরিংয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে- বিশেষত তরুণ প্রজন্মের নারী ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, অনলাইন হয়রানির শিকার নারীদের মানসিক পুনরুদ্ধার, আইনগত সহায়তা এবং সামাজিক সমর্থন নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে সাইবার সচেতন করে তোলা প্রয়োজন, যাতে তারা নিরাপদ ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে।
দ্য বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের চেয়ারপারসন জান্নাতুন নওরীণ উর্মি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু অনলাইন নিরাপত্তা নয়, বরং তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করা। আমরা এমন এক ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই, যেখানে তরুণীরা হয়রানির ভয় ছাড়াই নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই আয়োজন বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী ক্ষমতায়নের যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. রাহানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আশরাফ জালাল খান, সাংবাদিক সানজিদা ইসলাম জুঁই এবং ভারতের পলিটি অ্যাকশন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিবেদিতা বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক সংগঠন ‘দ্য বাংলাদেশ রেজোনেয়ার (টিবিআর)’ দীর্ঘদিন ধরে তরুণ সমাজ, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
বাংলাধারা/এসআর
