বদরুদ্দীন উমর আর নেই
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৫, ০২:১৪ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
মার্কসবাদী চিন্তাবিদ, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা জানান, অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু হয়।
১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে প্রবেশিকা ও ১৯৫০ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করে ১৯৫৩ সালে স্নাতক ও ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্স, ফিলসফি অ্যান্ড ইকোনমিকস (পিপিই) ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে পূর্ণকালীনভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট ও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনসহ একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থেকেছেন তিনি।
একই সঙ্গে ছিলেন prolifik লেখক ও গবেষক। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশ, যা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় জায়গাতেই পাঠকের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে। সংবাদপত্রে দীর্ঘদিন নিয়মিত কলাম লিখে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির নানা দিক নিয়ে মতামত দিয়েছেন তিনি। তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (তিন খণ্ডে), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি, বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক।
২০২৫ সালে বদরুদ্দীন উমরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তবে তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক অঙ্গনে বদরুদ্দীন উমরের অবদান আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাধারা/এসআর