স্বামীহারা নাজমা হারালেন শেষ সম্বল, দুর্বৃত্তের আগুনে আবার অন্ধকারে পরিবার
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৭:১৩ বিকাল

ছবি: বাংলাধারা
সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের বড় ওয়ালিয়া গ্রামের নাজমা বেগমের চোখে এখন শুধুই অশ্রু আর অনিশ্চয়তা। স্বামী আনোয়ার হোসেনকে হারানোর দুই বছর পর, জীবনের একমাত্র ভরসা ছোট্ট মুদি দোকানটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (২৫ জুন) গভীর রাতে। কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে। আর নাজমা বেগমও ভয়ে থম মেরে আছেন। থানায় অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না তিনি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, যদি কোনোমতে অভিযোগ করেন, তবে তার কিংবা তার একমাত্র সন্তানের ওপর আরও ভয়াবহ কিছু নেমে আসতে পারে।
নাজমার স্বামী আনোয়ার হোসেন একসময় কন্সট্রাকশন শ্রমিক ছিলেন। ২০১০ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ডান হাত হারান। সেইসঙ্গে শরীরের প্রায় অর্ধেক পঙ্গু হয়ে যায়। এরপর এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি ছোট মুদি দোকান খোলেন আনোয়ার। কিন্তু ভাগ্য তার প্রতি সদয় হয়নি। দুই বছর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আনোয়ার। স্ত্রী নাজমা ও একমাত্র পুত্রকে রেখে চলে যান অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
স্বামীর মৃত্যুর পর জীবনযুদ্ধে একাই নেমেছিলেন নাজমা বেগম। স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট দোকানটিই ছিল তার শেষ ভরসা। কোনোমতে দোকান চালিয়ে ছেলেকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সেই শেষ সম্বলও পুড়ে যাওয়ায় আজ আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এই নারী।
ঘটনার খবর পেয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি নাজমা বেগমকে নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। তবে এত সামান্য অর্থ দিয়ে কি একা সন্তানসহ নাজমার সংসার চলতে পারে?
অর্থকষ্টের পাশাপাশি আজ নাজমা বেগমের বড় আতঙ্ক নিরাপত্তা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন, “আমি কারো নাম বলতে চাই না। আমার ছেলেটাকে নিয়েই বাঁচতে চাই শুধু। কিন্তু কীভাবে বাঁচব, সেটাই জানি না।”
নাজমা বেগমের মতো অসহায় মানুষের পাশে সমাজের সচেতন, মানবিক ও সামর্থ্যবান মানুষের দাঁড়ানো উচিত- এমনটাই মনে করেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে সবার দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মানবিকতার এ কঠিন পরীক্ষায় সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে সাড়া দেয়, সেই প্রহরেই আজ চেয়ে আছেন পাথালিয়ার বড় রোয়ালিয়া গ্রামের নাজমা বেগম ও তার ছোট্ট সন্তান।
বাংলাধারা/এসআর