ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৩৬০ মিনিটের অপেক্ষা- যা নিয়ে গেলেন ঐশ্বরিয়া!

বিনোদন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০১:৪৯ দুপুর  

ফাইল ছবি

বিকেল ৪টা। দক্ষিণ ফ্রান্সের আকাশজুড়ে রোদের রাজত্ব। কেবল ত্বক নয়, যেন মনকেও জ্বালিয়ে দিচ্ছে সেই তাপ। কিন্তু রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করেই কান শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে উপচে পড়া ভিড়। দর্শক, উৎসুক জনতা আর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দেখে সহজেই বোঝা যায়- এই উৎসব শুধু একটি চলচ্চিত্র আয়োজন নয়, এটি যেন বিশ্ব সিনেমার তীর্থক্ষেত্র।

বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তখন ব্যস্ত দ্বিতীয় তলার প্রেস রুমে। কেউ ল্যাপটপে রিপোর্ট লিখছেন, কেউ ক্যামেরা সামলাচ্ছেন। হঠাৎ করেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে- বলিউডের জাদুকরী সৌন্দর্যের প্রতীক ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন প্রবেশ করছেন উৎসব প্রাঙ্গণে!

এই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যেন বিস্ফোরণ ঘটে মিডিয়া সার্কেলে। দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদকর্মীরা মুহূর্তেই ছুটে যান ভবনের পেছনের বিশেষ প্রবেশদ্বার ‘Entrée des artistes’-এর দিকে। এ দরজাটিই তারকাদের প্রবেশ ও প্রস্থান পথ- রেড কার্পেটের জগতে প্রবেশের প্রথম ধাপ।

বেলা ৪টায় গণমাধ্যমকর্মীরা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে যান ঐ গেটের সামনে। কারও চোখে উত্তেজনা, কারও চোখে ক্লান্তিহীন অপেক্ষার ঝিলিক। এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা… সময় গড়াতে থাকে। সন্ধ্যা নামতে শুরু করে। তারকা প্যারেডে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন অনেক পরিচিত মুখ-মার্কিন অভিনেতা জেরেমি স্ট্রং, ইউরোপের কিছু বিখ্যাত পরিচালক, নাম না জানা আরও অনেক শিল্পী। কিন্তু ঐশ্বরিয়া? তার দেখা মেলেনি।

রাত ১০টা। ভোর থেকে রোদে পুড়ে, সন্ধ্যায় শীতে কেঁপে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকরা যখন হাল ছেড়ে ফেরার পথ ধরেন, তখন মাথার ভেতর একটাই প্রশ্ন- এই খবরে কি ভুল ছিল? নাকি…?

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐশ্বরিয়া রাই আসলে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনে আসেনইনি। তার আসার কোনো শিডিউলই ছিল না ওই দিন। তাহলে হঠাৎ এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে?

এই বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ থেকে আগত ফটোসাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন-এর সঙ্গে। তিনি বলেন- বিকেলে ‘Entrée des artistes’ গেট থেকেই টম ক্রুজের ছবি তুলেছিলাম। পরে গুজব ওঠে ঐশ্বরিয়া রাই আসছেন। আমরাও ক্যামেরা তাক করে অপেক্ষা করতে থাকি। পরে জানলাম, আদৌই তিনি আসছেন না। তবে দিনের শুরুতে টম ক্রুজের ছবি তুলতে পারাটা আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।”

তিনি আরও যোগ করেন- এই জায়গাটায় সবসময়ই অনিশ্চয়তা কাজ করে। কখন কে আসবে, কে যাবে, কেউ জানে না। একেকটা মুহূর্ত সিনেমার মতোই চমকপ্রদ।”

১৩ মে শুরু হওয়া ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। সিনেমা শিল্পের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই আয়োজনে এবার মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ ও ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’ বিভাগে স্থান পেয়েছে আরও অসংখ্য বৈচিত্র্যময় সিনেমা।

তবে দর্শকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ নিঃসন্দেহে রেড কার্পেট। যেখানে একেক দিন একেক তারকা এসে হাজির হন ভিন্ন ভিন্ন রূপে।

আর ঐশ্বরিয়া? তিনি কেবল বলিউড তারকা নন, কানের রেড কার্পেটের দীর্ঘদিনের এক নিজস্ব আইকন। তার ফ্যাশন, স্টাইল আর ব্যক্তিত্বের ছটায় বিশ্ব মুগ্ধ হয় বারবার। ট্রলও হয়েছে, প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করেই কান উৎসবে এক আলাদা উন্মাদনা সৃষ্টি হয় প্রতি বছর।

সেই রাতে, সাংবাদিকদের মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু ঠিক তখনই কান শহরের সাগরতীর থেকে ভেসে এল সংগীতের মৃদু মুর্ছনা, বাতাসে মিশে থাকা নিয়ন আলোয় ঝলমল শহর আর তার মাঝে সিনেমার জীবন্ত চিত্র।

ঐশ্বরিয়াকে না পাওয়ার ক্ষোভ যেন মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল সে দৃশ্যপটে। কারণ, এটাই তো কান। এখানে প্রতিটি মুহূর্ত নিজেই এক গল্প, এক চলচ্চিত্র। আজ না হোক, কাল আবারও কোনো চমক অপেক্ষা করছে- এই আশাতেই উৎসব বাঁচে।

 

বাংলাধারা/এসআর