রামপাল-রূপপুর প্রকল্পে ক্ষতির শঙ্কা, বাতিলের পক্ষে আনু মুহাম্মদ
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ০২:৫৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, রামপাল ও রূপপুর প্রকল্প দুটিই দেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি ও বৈদেশিক আধিপত্যের প্রতীক। তিনি বলেন, “রামপাল ভারতীয় আধিপত্যের প্রতীক। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পও একই ধারার। এ দুটি প্রকল্প চালু থাকলে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণ বাড়বে। এখনই এগুলো বন্ধের রাস্তা খোঁজা উচিত। সামান্য আর্থিক ক্ষতির চেয়ে বৃহত্তর ক্ষতি রোধ করাই যুক্তিসঙ্গত।”
শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘বিগত শাসনামলে জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনের দায়’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “গত ১৫ বছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে সেই লুটপাটের পরিমাণ হিসাব করাই কঠিন। এই লুণ্ঠনের ব্যবস্থা ধরে রাখতেই জনগণের ভোট ছাড়াই শাসন চালিয়ে যেতে হয়েছে। দমন-পীড়ন ও স্বৈরশাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান সরকারের পতন ঘটিয়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখনই সময় সজাগ ও সংগঠিত থাকার। তরুণদের সেই পরিবর্তনের পথে বড় ভূমিকা নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, “বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি খাত ছিল প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র। ডাকাতির মতো করে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ২০১০ সালে পাস করা ইনডেমনিটি আইন দুর্নীতিবাজদের জন্য একরকম নিরাপত্তা চাদর ছিল। এই আইনের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে দুর্নীতির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিতরণ, সঞ্চালন ও মিটার কেনাকাটার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্তরেই অনিয়ম ও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট।”
তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-
- বিগত সরকারের করা সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন ও জনসম্মুখে প্রকাশ,
- স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল,
- ২০১০ সালের ইনডেমনিটি আইন বাতিল,
- বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দায়ীদের বিচার,
- জবাবদিহিমূলক গণশুনানি ও মানসম্পন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
ছায়া সংসদ বিতর্কে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশ নেন। বিতর্ক শেষে বিচারকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিজয়ীদের হাতে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, রিশান নসরুল্লাহ এবং মো. মহিউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মনে করেন, জ্বালানি খাতকে রাজনীতির বাইরে রেখে জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনাই এখন সময়ের দাবি। অতীতের ভুল শুধরে প্রকৃত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
বাংলাধারা/এসআর