ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের পাশে তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৯:২৮ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৪ জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার হৃদয়বিদারক ঘটনার পরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয়ভাবে তাৎক্ষণিক ও মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। লন্ডন থেকে সরাসরি এই দুর্ঘটনার আপডেট নেন তিনি। নির্দেশ দেন দলের সিনিয়র নেতাদের ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে গিয়ে হতাহতদের খোঁজ নেওয়ার। একইসঙ্গে দলের পূর্বঘোষিত একাধিক কর্মসূচিও স্থগিত করেন।

তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল উত্তরার তারারটেকে গিয়ে নিহত শিক্ষার্থী আরিয়ান, হুমায়রা ও বাপ্পির কবর জিয়ারত করেন। একই সঙ্গে তিনি শহীদ জুনায়েদ ও শারিয়ারের কবরেও শ্রদ্ধা জানান। পরে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে শোক জানিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেন।

এ ঘটনার পর শহীদ এবি শামীমের পরিবারকে দেখতে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শহীদ সারিয়া আকতারের বাড়িতে যান স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। নিহত শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর কবর জিয়ারতে আজ নীলফামারীতে গেছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলের নেত্রীরা। আগামী রোববার নিহত শিক্ষিকার বাসায় যাবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

তারেক রহমান এ ঘটনায় শুধু সহমর্মিতার বার্তা দিয়েই থেমে থাকেননি। বরং, রাজনৈতিক কর্মসূচির গতি রূদ্ধ করে দলের নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থলে সক্রিয় থাকতে বলেছেন। তিনি দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামকে একটি উদ্ধারকারী দলসহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। রক্তদানের উদ্যোগ নেয়া হয় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। হাসপাতালে থাকা আহতদের রক্তের সংকট না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির দিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পেশাজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই তিনি অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করেন এবং দলের বিভিন্ন কর্মসূচি বাতিল করেন। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের পূর্বনির্ধারিত র‌্যালি, মহিলা দলের নারী আন্দোলনবিষয়ক আলোচনা সভা, গণঅভ্যুত্থান ও বিজয়ের মাস উপলক্ষে যেসব সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল, সেগুলোকেও তিনি স্থগিত করেন। এমনকি পেশাজীবীদের আলোচনা সভাতেও গান পরিবেশনা বাদ দিয়ে নিহতদের স্মরণে দোয়া করা হয়।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিতভাবে আহতদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া উভয়ই দলের প্রতিটি স্তরে আহ্বান জানিয়েছেন, আহতদের পাশে দাঁড়াতে, রক্তের ঘাটতি পূরণে সহযোগিতা করতে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি মানবিক সহমর্মিতা জানাতে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ সভায় এই দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রী ও পাইলটের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। সভায় তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন এবং দুর্ঘটনাকবলিত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

এই পুরো ঘটনায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং একটি মানবিক নেতৃত্বের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারেক রহমানের দূরদর্শিতা ও দ্রুত পদক্ষেপ দলের ভেতরে যেমন দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করেছে, তেমনি জনগণের চোখেও রেখেছে একটি ইতিবাচক ছাপ।

এটি কেবল একটি শোকাবহ মুহূর্ত নয়, একটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানবিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মুহূর্তও বটে।

বাংলাধারা/এসআর