অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর: পরিবর্তনের পথে একটি জাতি
প্রকাশিত: আগস্ট ০৮, ২০২৫, ০৯:০৪ সকাল

ছবি: সংগৃহিত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়।
গত এক বছরে সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে নানা খাতে সংস্কারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে নতুন একটি রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা দাঁড় করানো হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছে এই সরকার।
৫ আগস্ট, যেদিন গণজাগরণ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এবং শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন, সেই দিনটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। একই দিনে অধ্যাপক ইউনূস জানান, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার পরদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যাতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এরপর ৭ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। এই আলোচনার ভিত্তিতেই ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, দুর্নীতি দমন, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার ও নারী বিষয়ক কমিশন। এসব কমিশন তাদের সুপারিশ পেশ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সরকার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়, যা কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা ছিল। তবে সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং, সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রণ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়। জুন মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নেমে আসে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রধানমন্ত্রী ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। প্রবাসীদের আস্থা ও সরকারপ্রদত্ত সহজ রেমিট্যান্স ব্যবস্থার ফলে গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এসেছে রেকর্ড ৩০৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। এর প্রভাবে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। দীর্ঘদিন পর টাকার মান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, গত ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ৪ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হলেও রিজার্ভে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং তা বেড়েছে।
এক বছরের এই পথচলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনআস্থা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়েছে। সামনে অপেক্ষা করছে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ। তবে দেশের জনগণ আশাবাদী, এই সরকারই দেশকে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাধারা/এসআর