জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০২:২৭ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে তাঁর সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া (ইউকেএম) অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরের কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর সাহসী তরুণরা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে একটি মর্যাদাপূর্ণ, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান দেশের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশাকে নতুন অর্থ দিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকার ন্যায়সংগত শাসনব্যবস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং কাঠামোগত সংস্কারও রয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায়।
অর্থনীতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উদ্যোক্তা উন্নয়ন, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও জরুরি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান বড় স্বপ্ন দেখার, সাহসীভাবে চিন্তা করার এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার। তিনি বলেন, “সাফল্য শুধু নিজের জন্য নয়, বরং অন্যদেরও উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়াতেই প্রকৃত অর্জন নিহিত।”
ড. ইউনূস বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমালোচনা করে বলেন, “আজ সম্পদ কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে, যা বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি করছে। আমাদের দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি, যেখানে প্রত্যেকের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার সুযোগ থাকবে।”
নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, “মানুষ প্রতিভাহীন বা স্বপ্নহীন বলে দরিদ্র নয়, বরং ব্যবস্থার ন্যায্য সুযোগ না পাওয়ার কারণেই তারা পিছিয়ে থাকে। ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা সেই সুযোগ করে দিয়েছে।”
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্ব পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নয়নের যৌথ স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টর, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহও ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দ কাদির ও ইউকেএমের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সুফিয়ান জুসোহসহ অন্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাধারা/এসআর