ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর রাষ্ট্রীয় সম্মানে জানাজা সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:১২ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর জানাজা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। দেশের জন্য, বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করা এই বীরদের শেষ বিদায়ে শোক ও শ্রদ্ধায় নীরব হয়ে ওঠে ঢাকা সেনানিবাস।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় সেনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হলেন-
নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মণ্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার বাসিন্দা লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

নামাজে জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের পক্ষ থেকে শহীদদের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষ থেকে জানানো হয় গভীর শ্রদ্ধা।

গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউএনআইএসএফএ’র আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘাঁটিতে আকস্মিকভাবে একাধিক ড্রোন হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।

এ হামলায় আহত ৮ জন শান্তিরক্ষীকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতরা হলেন-
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান,
সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, বীর (দিনাজপুর),
কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি, সিগনালস (ঢাকা),
ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম, ইএমই (বরগুনা),
সৈনিক মো. মেজবাউল কবির, বীর (কুড়িগ্রাম),
সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার, ইঞ্জিনিয়ার্স (রংপুর),
সৈনিক চুমকি আক্তার, অর্ডন্যান্স (মানিকগঞ্জ),
সৈনিক মো. মানাজির আহসান, বীর (নোয়াখালী)।

আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অন্যরা শঙ্কামুক্ত এবং একজন চিকিৎসা শেষে ইতোমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তবে এই গৌরবের পথ কখনোই সহজ ছিল না। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন বীর সদস্য সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ, বিশ্বশান্তির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুদানের মরুভূমিতে ঝরে যাওয়া এই ছয়টি প্রাণ সেই ত্যাগের ইতিহাসে যুক্ত করল আরও এক বেদনাবিধুর অধ্যায়।

বাংলাধারা/এসআর