মরুভূমিতে বাংলাদেশের বিজয়ের কেতন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:২২ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
আবুধাবির গরম হাওয়া আর চাপা উত্তেজনার মধ্যে অবশেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন লিটন দাস। চোখেমুখে ক্লান্তি, কিন্তু বুক ভরা তৃপ্তি। আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ ধরে রাখল এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ওঠার আশা। এখন কেবল অপেক্ষা, বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে গেলে আফগানরা বিদায় নেবে, আর তাতেই খুলে যাবে লিটন-নাসুমদের সামনে পরের রাউন্ডের দুয়ার। তবে আফগানরা জিতলে হিসাব কষতে হবে রানরেটের, যেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ০.২৭০ এভারেজে।
আফগানিস্তানের শক্তি স্পিন। তাই বাংলাদেশও ভরসা রেখেছিল স্পিনে। একাদশে রাখা হয় নাসুম আহমেদকে। ব্যাটিং ব্যর্থতার ক্ষোভ যেন জ্বালানি হয়ে তাকে আরও তীব্র করে তোলে। প্রথম ওভারেই সেদিকুল্লাহকে এলবিডব্লিউ করেন, এরপর ফেরান ইব্রাহিম জাদরানকে। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৭ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। পরে লেগস্পিনার রিশাদ গুরবাজকে ৩৫ রানে থামিয়ে দেন, সঙ্গে ফেরান গুলবাদিন নায়েবকেও।
তবে দুর্বলতা ছিল পার্টটাইম বোলিংয়ে। মেহেদী হাসানকে বসিয়ে সাইফ ও শামীমের ওপর দায়িত্ব দেন লিটন, যা হয়ে দাঁড়ায় বড় ঝুঁকি। দুজন মিলে দেন ৫৫ রান। বিশেষ করে আজমতউল্লাহর তাণ্ডবে আফগান সমর্থকরা গ্যালারিতে উল্লাসে ফেটে পড়লেও শেষ দিকে মুস্তাফিজ ও তাসকিন মিলে ম্যাচটিকে বাংলাদেশের ঘরে টেনে আনেন।
ম্যাচ চলাকালে ওয়াসিম আকরামের কাছে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ কি জিততে পারবে? সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি জানতে চান, এই মাঠে উইনিং স্কোর কত। পরে জানা যায়, এবছর এই মাঠে গড় ইনিংস ১৭০, আর জয়ের গড় ১৮৬। কিন্তু বাংলাদেশ থেমে যায় ১৫৪ রানে। শেষ পাঁচ ওভারে ওঠে মাত্র ৩৫ রান। তারপরও বোলারদের দৃঢ়তা আর সোহানের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে হতাশা ছিল জাকের আলীর ১৩ বলে ১২ আর হৃদয়ের ২০ বলে ২৬ রানের ইনিংস নিয়ে। ওপেনিংয়ে সাইফ অনেক সময় নষ্ট করেন; প্রথম ১১ বলে ৯টি ডট। কিন্তু তার সঙ্গী তানজিদ তামিম সাহসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচে আলো ছড়ান। ফারুকিকে এক ওভারেই চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৫২ রান করে গ্যালারি মাতান। সাইফ যদিও স্ট্রাইক ঘোরাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত সুইপ করতে গিয়ে আউট হন। তবু লিটনের জন্য ছোট্ট এক স্বস্তি ছিল, দীর্ঘ ১২ ম্যাচ পর ওপেনিং জুটি থেকে ৫০ রানের পার্টনারশিপ।
শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচটি বাংলাদেশের হাতে ঝুলে ছিল। তবে মাঠ ছাড়ার সময় লিটনের চোখে স্বস্তির ঝিলিক ছিল অনেক দিনের অপেক্ষার প্রতিফলন। মরুর বুকে উড়েছিল লাল-সবুজের বিজয়ের কেতন, তৃষ্ণার্ত পথিকের কাছে জল পাওয়ার মতো অমূল্য স্বস্তি।
বাংলাধারা/এসআর